Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

জাঠিভাঙা বধ্যভূমি ও গণহত্যা

জাঠিভাঙা বধ্যভূমি ও গণহত্যা


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যাকাণ্ড চালায়। এটা বিশ্বের নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড। জাতিসংঘের গণহত্যা সংজ্ঞায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রথম চারটিই সংঘটিত হলেও এখন আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি মেলেনি। বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ এই গণহত্যায় ৩০ লাখ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সহযোগিতায় এ হত্যাকাণ্ড চলে। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যায়। চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে এক হাজারের ওপর। বধ্যভূমি থেকে অসংখ্য মাথার খুলি, শরীরের হাড়গোড়, চুল পাওয়া গেছে। সারা দেশে এসব বধ্যভূমি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। জাঠিভাঙা বধ্যভূমি ঠাকুরগাঁও জেলার নৃশংসতম গণহত্যার দৃষ্টান্ত বহন করে।

 

ঠাকুরগাঁও সদরের বালিয়া ইউনিয়নের কিসমত সুকানপুকুরী মৌজার জাঠিভাঙা গ্রামটি এখন বিবধাপল্লী নামে পরিচিত। এখানে একাত্তরের ২৩ এপ্রিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা। স্বাধীনতা ঘোষণার পর রাজাকার, আলবদর ও আল-শামসের সহায়তায় হানাদার বাহিনী মুক্তিকামী জনগণের ওপর অমানবিক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে শুরু করে। এ নির্যাতন থেকে বাঁচতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়া, শুখানপুকুরী, জগন্নাথপুর, চকহলদি, সিংগিয়া, চন্ডীপুর, বাসুদেবপুর, মিলনপুর, গৌরীপুর, খামার ভোপলা, দিনাজপুরের বীরগঞ্জের পলাশবাড়ী ও পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার সংখ্যালঘু পরিবার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল কৌশলে তাদের জাঠিভাঙ্গা নদীর পাড়ে জড়ো করে হানাদার বাহিনীর দোসররা। রাজাকাররা খবর দিলে হানাদার বাহিনী চারদিক থেকে সব নারী-পুরুষকে ঘিরে ফেলে। এরপর গুলি আর ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ফেলে দেওয়া হয় নদীতে। একদিনে বিধবা হয় আড়াইশ মহিলা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এটিই ঠাকুরগাঁও জেলার সবচেয়ে বড় গণহত্যার ঘটনা।