বাহা উৎসব
বাহা পরব বা বাহা উৎসব হল সাঁওতাল আদিবাসীদের দ্বারা পালিত একটি উৎসব। সাঁওতালি ভাষায় 'বাহা' মানে ফুল। বাহা পরবে (ফুল উৎসবে) পুরুষ, মহিলা ও শিশুরা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়।
বাহা উৎসব সাঁওতাল বর্গের মানুষ প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে্র দোল পূর্ণিমার পর থেকে পালন করে থাকেন। এই উৎসবে সমস্ত দেবতার থান গোবর দিয়ে নিকিয়ে রাখা হয়। পুরুষেরা দল বেঁধে শিকারে বের হন। উৎসবের শেষে নাচগান হয়। মেয়েরা নতুন ফুলে নিজেদেরকে সজ্জিত করেন। ঠাকুরগাঁওয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। প্রতি বছর জঙ্গল মহল উৎসবে আদিবাসীদের অন্যান্য পরবের সঙ্গে বাহা পরবের নৃত্যও প্রদর্শিত হয়ে থাকে।
কারাম উৎসব
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একটি অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে কারাম। ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশী তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। সাঁওতাল, ওঁরাও, মাহাতো, বড়াইক, কুর্মি, সিং, পাহান, মাহালিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ রীতিতে কারাম উৎসব পালন করে থাকে। কারাম নামের গাছের ডাল কেটে বিভিন্ন প্রাচীন প্রথা মান্য করে এই উৎসব করা হয় বলে এর নাম কারাম উৎসব।
গাছের ডাল মাটিতে পুঁতে পূজা করা হয়। তাই এটি কোথাও কোথাও ডালপূজা বা বৃক্ষপূজা নামেও পরিচিত।
কারাম উৎসব উদযাপনের জন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নর-নারী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পূজার প্রথম দিন উপোস থাকে। উপোস অবস্থায় মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনে। এরপর তারা একটি পূজার বেদি নির্মাণ করে। সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারামগাছের ডাল পূজার বেদিতে রোপণ করা হয়। রাতে ফুল, ফলে ভরা নৈবেদ্য সাজিয়ে বেদির চারপাশে বসে পূজা শুরু করে। পুরোহিত উৎসবের আলোকে ধর্মীয় কাহিনি শোনান। সেই সঙ্গে চলে কাহিনির অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যা শেষ হলে বেদির চারধারে ঘুরে ঘুরে যুবক-যুবতিরা নাচতে থাকে। পূজা শেষে উপোস থাকা কিশোরীরা চিতই পিঠা, কুশলি পিঠা প্রভৃতি খাবার নিয়ে পরস্পরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে উপোস ভাঙে। শেষে নিজেদের মধ্যে সংগ্রহ করা চাল, ডালে তৈরি খিচুড়ি দিয়ে উপস্থিত স্বজন ও অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।
বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটন থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে মূলত এই কারাম পূজা পালন করা হয়ে থাকে। কথিত আছে, আদিবাসীদের দুই সহোদর ধর্মা ও কর্মা। ধর্মা কারামগাছকে পূজা করতেন; কিন্তু কর্মা করতেন না। কর্মা একদিন পূজার কারামগাছ তুলে নদীতে ফেলে দেন। এরপর তিনি নানা বিপদ-আপদ আর অভাব-অনটনে পড়েন। কর্মা আবার সেই গাছ খুঁজে এনে পূজা শুরু করলে অভাব দূর হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস