জেলা হিসেবে ঠাকুরগাঁও ১৯৮৩ সালে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়। ভাষার ক্ষেত্রে অবশ্য সে ধরনের কোন বিভাজন গ্রাহ্য নয়। তবু বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত থাকাকালীন এই অঞ্চলের ভাষার স্বাতন্ত্র্য ছিল সুস্পষ্ট। বিশেষত: সাঁওতাল, ওরাও আদিবাসী এবং রাজবংশী, পলিয়া উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রাত্যহিক জীবনাচরণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংমিশ্রণ ভাষাগত পরিবেশকে করেছে বৈচিত্র্যময়। এছাড়া রয়েছে অত্র অঞ্চলের পশ্চিমাঞ্চলীর কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে ভারতের মালদহ, পূর্ণিয়া ও বিহার অঞ্চলের সন্নিকটবর্তী প্রভাব।
ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের ভাষা বৈশিষ্ট্যকে দুটি উপ-অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়- প্রথমত: ঠাকুরগাঁও সদর ও পীরগঞ্জ উপজেলার পূর্বাঞ্চল। দ্বিতীয়ত : পশ্চিম সীমান্তবর্তী উপজেলা বালিয়াডাঙ্গী, নেকমরদ, হরিপুর ও রানীশংকৈল।
এই শ্রেণিকরণের উৎস স্যার জর্জ গ্রীয়ারসনের অভিমত, তিনি মনে করেন উপভাষার মধ্যে পরিবর্তন বা পার্থক্যের প্রধান কারণ প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা। তিনি প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নদীর প্রবাহ অথবা পর্বত দ্বারা বিচ্ছিন্নতাকে নির্দেশ করেছেন। গ্রীয়ারসনের এই পদ্ধতি বর্তমানে কার্যকর মনে করা না হলেও আলোচ্য অঞ্চল সম্পর্কে লক্ষণীয় যে, ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রবাহিত টাঙ্গন নদীর পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ভাষায় মৌলিক প্রভেদ বিদ্যমান।
স্যার জর্জ গ্রীয়ারসনের অবলম্বনে মুনীর চৌধুরী এই অঞ্চলসহ রাজশাহী বিভাগের উপভাষাকে উত্তবঙ্গীয় উপভাষা বলে নির্দেশ করেছেন। কিন্তু সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে এই অভিহিতকরণ সম্প্রসারিত হতে পারে। ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের দ্বিতীয় উপ-অঞ্চলের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের একটি বিশেষ ধ্বনিতাত্ত্বিক সাদৃশ্য রয়েছে-যা আলোচ্য প্রথম উপ-অঞ্চলের মধ্যে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এমনকি একই ভৌগোলিক পরিসীমার পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার অন্য কোন স্থানে এই বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় না। তা হলো উষ্মতালব্য শ এবং উষ্ম দমত্ম্য স ধ্বনির পারস্পরিক পরিবর্তন ও উচ্চারণগত বিভ্রান্তি।
ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের কথ্যভাষা ও লোকসাহিত্য উভয় ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার সাধু রীতিটিই অনুসৃত হয়েছে। যেমন- মন কহেচে বাহির যাও (লোক সঙ্গীত) কেবা গোসল করিবে হে (ঐ) পালখুটা কাটে ফেলালেন জমিনের মাঝে (ঐ)।
ডঃ শহীদুল্লাহ্ মনে করেন যে, কোন কোন উপভাষার মতো উত্তর বঙ্গের উপভাষাতেও প্রাচীন বাংলার অনেক উপাদান এখনো সংরক্ষিত। যেমন- প্রাচীন বাংলার এক বচনের মই সর্বনামটির রূপান্তর মুই আধুনিক মিষ্টভাষায় পরিত্যক্ত হলেও দিনাজপুরের উপভাষায় তা এখনও বিদ্যমান। সাধু বাংলা ভিন্ন উপমহাদেশের সমস্ত আর্যভাষায় নিষেধাত্মক অব্যয় (না) ক্লিয়ার পূর্বে বসে। এই বৈশিষ্ট্য প্রাচীন ও আদি-মধ্য বাংলাতেও রক্ষিত। এই প্রাচীনত্ব চট্টগ্রামের উপভাষার মতো ঠাকুরগাঁয়ের উপভাষাতেও ব্যবহৃত হয়। যেমনঃ না চাই মানিক্যের কড়ি না ছাড়ি দুয়ার (লোক সঙ্গীত) না আসে ঘুরিয়া (ঐ) বহিবার নাই মনাছে (ঐ) অবশ্য পার্শ্ববর্তী রাজবংশী উপ-ভাষাতেও এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
বস্ত্তত: এই অঞ্চলের উপভাষায় প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলাভাষার প্রভাব এখনো বর্তমান। ড: শহীদুল্লাহ্ উত্তবঙ্গের ভাষার সঙ্গে আসামী ভাষার সাদৃশ্য নির্দেশ করেছেন। এই অঞ্চলের ভাষাগত প্রচীনতার কয়েকটি লক্ষণ নিম্নরূপঃ
ক. গ্রামের নামে প্রাচীনত্বঃ বঠিনা, ডহুরা, ডবরা, ডিবোর, বাংরোট, রাউতাই, ঠুমনিয়া, নিবাটুঙ্গি, লাউথুতি, সান্ত্রাই।
খ. মানুষের নামে প্রাচীনত্বঃ কুঠু, ঢাডু, ডকা, গাঁঠু, ডডি, ঢেরু, ধেড়পা (তুলনীয় চর্যাপদের হাপা) ডুকুরু (তুলনীয় চর্যাপদের ভুসুকু) ডুংলু টুনকু, বং (বংগোষ্ঠী? )
গ. শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের সঙ্গে তুলনাঃ বুঢ়া [বংশীখন্ড, ১২] কাঢ়ে (বংশীখন্ড ২৮] নারীক, মোহর, বাশীতু করিবো, ঝুরে পাসরি, তহি (এ অঞ্চলে হি) ঝুটা, যাহু, নেও, কহু, ঘরত ইত্যাদি।
এই জনপদে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের সামাজিক সম্বোধনের রূপ অন্যান্য এলাকার মতোই স্বতন্ত্র। তবে নিম্ন শ্রেণীর হিন্দুদের সম্বোধনের প্রকৃতি কিছুটা ভিন্নধর্মী। যেমন-মুসলমান দাদী, হিন্দু ঠাকুরমা, নিম্নশ্রেণী-বাই। মুসলমান দুলাভাই/ভাই সাহেব, হিন্দু জামাই বাবু, নিম্নশ্রেণী-বহিনা/আনু। মু-ভাবী, হি-বৌদী, নি, শ্রে-ভৌজি। স্বামী, অর্থে ভাতার শব্দটি এ অঞ্চলে বহুল প্রচলিত। বলাবাহুল্য এটি প্রাচীন বাংলা শব্দ। বিবাহ শব্দটির এই অঞ্চলের পরিচিত রূপ বিহা। নিম্নশ্রেণীর হিন্দুদের মধ্যে বিবাহের বিকল্প শব্দ ‘বেচে খাওয়া’ এটিও বহু উচ্চারিত। পূর্বে মেয়ে পক্ষ পণ নিতো; শব্দটিতে সেই স্মৃতি বিজড়িত। প্রাচীন বাংলা রূপের ন্যায় বিধবা শব্দের প্রচলিত রূপ এখানে ‘রাঢ়ি’ বা ‘আড়ি’।
নিম্নশ্রেণীর হিন্দুদের মধ্যে তালব্য-শ’ ধ্বনির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষনীয়। যেমন : কহিশিত, গেইশিত্, খাইশিত।
সীমান্তবর্তী অঞ্চলে (পশ্চিমাঞ্চল) ক্রিয়াপদের অমেত্ম ল ধ্বনির দ্বিত্ব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত। যেমন : কোহিল্ল, খাইল্ল, মারিল্ল।
ধ্বনিতত্ত্ব
স্বরধ্বনি: স্বরধ্বনির উচ্চারণ চলিত ভাষার অনুরূপ। আ’ এবং ‘ই’ পরিবেশগত কারণে অনেক সময় অর্ধ স্বরধ্বনির ন্যায় উচ্চারিত হয়। যেমনঃ রাত > আইত এবং জাইত > (জাত)।
আ’ এবং এ-র পর ব্যাঞ্জনধ্বনি হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘ই’ স্বরধ্বনির আগমন ঘটেছে। যেমনঃ গেছে থেকে গেইছে, বাদ্য থেকে বাইদ্য, আনছি (আনিতেছি) থেকে আইনছি।
চলিত বাংলায় মূল স্বরধ্বনির সবকটিই আনুনাসিক হতে পারে। আনুনাসিকার ফলে সৃষ্টি হয় স্বতন্ত্র অর্থবোধক শব্দ। ঠাকুরগাঁও অঞ্চলেও এই বৈশিষ্ট্য রক্ষিত। এছাড়া, কণ্ঠনালীয় উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনি হ অনেক সময় আনুনাসিক হয়। যেমন: তাহ, যাহে এঁহে, অঞে, তঁহ। মূল শব্দের নাসিক্য ধ্বনি তদ্ভবে আনুনাসিক হতে পারে (চন্দ্র থেকে চাঁদ) এই নিয়ম কথ্য বাংলায় সুপ্রচলিত। কিন্তু আলোচ্য অঞ্চলে কোন কোন শব্দে আনুনাসিক ধ্বনি নাসিক্য ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন-আখি থেকে আঁকি, কাদা থেকে কাঁন্দিয়া, চাঁদ থেকে চান। কোথাও কোথাও আনুনাসিকতা বিলুপ্ত হয়েছে। যেমনঃ বাঁশ থেকে বাশ, খোঁজ থেকে খোজ, ঝাঁকে থেকে ঝাকে।
ব্যঞ্জন ধ্বনি: চলিত ভাষার তুলনায় ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের উপভাষায় ব্যঞ্জন ধ্বনির উচ্চারণ-বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্য। এই অঞ্চলে মহাপ্রাণ ঘোষস্পৃষ্ট ঘ, ঝ. গ. জ. ধ. ভ, স্বল্পপ্রাণ ও অঘোষরূপে উচ্চারিত হয়। যেমনঃ বাঘ, ঘুরিয়াল, গাস, গিয়ান, ঝুরে, ঝানায়, জুরিণূ, জামুরি, ধাপ, ভার, ভমরা। তবে ওকার এর পরিবেশে মহাপ্রাণ ঘোষস্পৃষ্টতা বজায় থাকে। যেমন-ঘোড়া, গোরে, ধোয়া, জোওয়াব। এমনকি ‘ওকার’ হইলে অঘোষ ধ্বনিও ঘোষবৎ উচ্চারিত হয়। যেমন-কোল্লো, চৌকা, খোন্ডিয়া।
প্রশস্ত দন্তমূলীয় অঘোষ-ঘৃষ্ট-‘চ’, দন্তমূলীয় অঘোষ মহাপ্রাণ ঘৃষ্ট-‘ছ’ এবং অঘোষ মহাপ্রাণ ওষ্ঠ্য স্পৃষ্ট-‘ফ’ কথিত অঞ্চলে ঘৃষ্ট স্পৃষ্ট ও মহাপ্রাণ হিসেবে উচ্চারিত হয় না। ‘চ’ ও ‘ছ’ উচ্চারণকালে জিভ ঘর্ষিত হয় না। কেবল দন্তমূলকে স্পর্শ করে। যেমনঃ চাম, চেকর, চিতুল চৈত/ছাম, ছিটিয়া, দুয়া/ফা, ফেলেয়া, ফুলা, ফুপা। কখনো কখনো ‘চ’ ধ্বনি ‘ছ’-এ রূপান্তরিত হয়েছে। যেমনঃ মরিচ থেকে মইছ।
ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের কথ্যভাষা ও লোকসঙ্গীতে তাড়নজাত-‘ড়’ সর্বত্র দন্ত্য-র উচ্চারিত হয়েছে। যেমন-আড়ত’ এর উচ্চারণ আরত্, দড়ি থেকে দরি, গুড় থেকে গুর, উড়া থেকে উরা। আলোচ্য অঞ্চলে ড়’-ধ্বনিটি অনুচ্চারিত। কোন কোন ক্ষেত্রে ড়-ধ্বনি মহাপ্রাণ তাড়নজাত ঢ়’এ রূপান্তরিত। যেমনঃ বেড়া-র উচ্চারণ বেঢ়া/বুড়া-র উচ্চারণ বুঢ়া/আরো-র উচ্চারণ আঢ়ো।
‘র’ ধ্বনির ‘অ’ ধ্বনিতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি রাজবংশী উপভাষার মতো অত্র অঞ্চলে উচ্চারণে বহু পরিচিত। যেমনঃ রাত থেকে আইত, রান্নাঘর থেকে আন্ধাঘর, রান্নাবাড়া থেকে আন্ধনবাড়ন। লক্ষণীয়, এই পরিবর্তন কেবলমাত্র শব্দের শুরুতেই প্রযোজ্য।
নাসিক্য- ন’ এবং দন্তমূলীয় পাক্ষিক-‘ল’ ধ্বনি পরস্পর স্থান পরিবর্তন করেছে। যেমনঃ নে থেকে লে/নেছে থেকে লেছে/নাগাল থেকে লাগাল/লাথ্থে থেকে নাথ্থে/লুকিয়ে থেকে নুকিয়া/লাল থেকে নাল/লাঙ্গল থেকে নাঙ্গল।
দুটি স্বরধ্বনির মাঝখানে অথবা শব্দের শেষে ‘ক’ ধ্বনি থাকলে ‘খ’ অথবা গ’-এ রূপান্তরিত হয়েছে। যেমনঃ পুকুর থেকে পোখর, একটা থেকে এখেটা, কাঁথা থেকে খেতা, সবাকে থেকে সগাকে, তোকে থেকে তোখো।
‘গ’ ধ্বনি দুই স্বরধ্বনির মধ্যে থাকলে, কখনো কখনো ঘ-এ পরিণত হয়েছে। যেমনঃ আঁঙ্গিনা থেকে এঘনা, ডাংগা থেকে ডাংবা।
তালব্য-স্পর্শ জ’ ধ্বনি অধিকাংশ অঞ্চলের মতো ঠাকুরগাঁয়েও ইংরেজী Z (জেড) ধ্বনির মতো উচ্চারিত হয়। প্রকৃত উচ্চারণ কদাচিত শোনা যায়। যেমনঃ জার, জেহেল, জহর, জাইত।
তাড়নজাত-‘র’ এর স্থলে পাশ্বিক-ল’ এর উচ্চারণ কোন কোন ক্ষেত্রে পরিলক্ষি হয়। যেমনঃ শরীর থেকে শরীল।
রূপতত্ত্ব:
প্রফেসর মুনীর চৌধুরীকে অনুসরণ করে ড: রফিকুল ইসলাম দেখিয়েছেন যে, বাংলাদেশের উপভাষাসমূহে রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য তিনটি ক্ষেত্রে সর্বাধিক: সর্বনাম, কারক, বিভক্তি ও ক্রিয়া-বিভক্তি। যেমনঃ সর্বনাম: ঠাকুরগাঁও মোর, নেয়াখালী-আর। ঠাকুরগাঁয়ে-‘হামার’ ময়মনসিংহে-‘আমরার’, কুমিল্লায় ‘আমাগো’, বরিশালে ‘মোগো’। কারক বিভক্তিঃ ঠাকুরগাঁয়ে চাকরদেক, পূর্ববঙ্গে-ছাঅরগো, দক্ষিণ বঙ্গে ছঅরগুন।
ক্রিয়া-বিভক্তিঃ ঠাকুরগাঁয়ে-‘বলিম’ (বলবো) পূর্ববঙ্গে-‘কমু’, দক্ষিণ বঙ্গে-‘খইয়ুম’।
ঠাকুরগাঁও ভাষা অঞ্চলে প্রাণীবাচক সর্বনামের প্রথম পুরুষে, পুরুষ ও স্ত্রীবাচক রূপভেদ পরিলক্ষিত হয় না। অর্থাৎ পৃথক চিহ্ন নেই। এছাড়া, সাঁওতালী ভাষায় যেমন উভয় লিঙ্গ বাচক শব্দের পূর্বে পুরুষ বা স্ত্রীবাচক কোন শব্দ ব্যবহার করে লিঙ্গ নির্দেশ করা হয়। আলোচ্য অঞ্চলেও অনুরূপ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত। যেমনঃ বেটা ছুয়া (ছেলে) মেয়েছেলে, বুঢ়া লোক, বুড়ী মানষী।
আরো একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য এই যে, তুমি ও আপনি সর্বনামের ব্যবহার এ অঞ্চলের ভাষায় প্রায় দুর্নিরীক্ষ। আপনি-এর পরিবর্তে অমরা’ এবং মাক শব্দ দুটিতে হ-এর ব্যঞ্জনা এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য উচ্চারণ-বৈচিত্র এবং তুমি-এর পরিবর্তে তুই শব্দটি সর্বত্র প্রচলিত।
ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের লেকভাষায় সংস্কৃতি শব্দ বিরল দৃষ্ট। বরং প্রাকৃত অপভ্রংশ প্রাচীন ও মধ্য বাংলা এবং হিন্দী শব্দের প্রয়োগ-বাহুল্য পরিলক্ষিত হয়। অস্ট্রিক দ্রাবিড় ও সাঁওতাল মুন্ডা ভাষার কিছু শব্দও অত্র এলাকায় সুপ্রচলিত। পূর্বাঞ্চলে প্রাচীন মধ্য বাংলা প্রাকৃত অপভ্রংশ, অস্ট্রিক ও মুন্ডা ভাষার শব্দ এবং পশ্চিমাঞ্চলে হিন্দী শব্দের প্রচলন বেশি। পূর্বাঞ্চলে সাঁওতাল, ওঁরাও, পলিয়া এবং রাজবংশী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের সংমিশ্রণ ঘটেছে। ফলে এ অঞ্চলের ভাষায় এই শ্রেণীর শব্দগুচ্ছ অন্তর্ভুক্ত। পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের মালদহ, পূর্ণিয়া ও বিহার অঞ্চলের ভাষার প্রভাব সুগভীর।
বস্ত্তত, ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের লোকভাষায় সংরক্ষণ প্রবণতা লক্ষণীয়। বাক্যরীতি এবং ভাষার সামগ্রিক আবহে প্রাচীন বাংলা ভাষার সাংগঠনিক রূপটি এই অঞ্চলের ভাষায় এখনো বিদ্যমান।
রচনায়: মুহম্মদ জালাল উদ-দীন
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস